1. [email protected] : yellow fish : yellow fish
  2. [email protected] : bayzid saad : bayzid saad
  3. : deleted-CUehVWZt :
  4. [email protected] : support :
  5. : wp_update-1720111722 :
কলেজে একদিন
কলেজে একদিন

প্রতিদিন বাসের কনডাক্টরের সাথে হাফ ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটি, সপ্তাহে ৬ দিন রস-কষ হীন ক্লাস, আর কলেজে কখন স্যারেরা পরিচয় পত্রের গলায় ঝুলিয়ে রাখা মহামূল্যবান কার্ডটি নিয়ে যায় সেই ভয়ে থাকা, গ্রুপ ক্লাসের জন্য তিন তলা সিঁড়ি ভেঙে অন্য ভবনে গিয়ে গ্রুপ ক্লাস করতে করতে যখন হাঁপিয়ে উঠছি তখন প্রশান্তি নিয়ে এসেছে হাসান স্যারের ক্লাস, জেসমিন সিরাজী ম্যামের হাসি, আর বর্ণালী ম্যামের ডায়েরি ক্লাস।

কলেজে প্রতিদিন নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচয়, আর তাদের নাম ভুলে যাওয়া!

পরদিন আবার তাকে জিজ্ঞাসা করা,”তোমার নামটা যেন কি, ভাই?”
আরো আছে, জীয়াব, শাওন, ববি, লিয়া, ফারহানার সাথে অফ ক্লাসে আড্ডা।
ওহ; বলতে ভুলেই গিয়েছি আরও একটি মজার ঘটনা আছে।
তা হলো, অনুমতি ছাড়া অন্যের ব্যাগ থেকে চকোলেট খাওয়া। এভাবে চলছে আমার কলেজ জীবনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া।

গ্রুপ ক্লাসের জন্য আমাদের সি-সেকশন থেকে বি-সেকশনে ক্লাস করতে হয়। আর বি-সেকশনের অনেকেই তখন তাদের গ্রুপ ক্লাসে চলে যায়। আর আমাদের বসতে হয় তাদের সিটে। সাধারণত মেয়েদের ব্যাগের বাইরের পকেটে চকোলেট থাকে।

আর আমরাও সেই সুযোগটা ব্যবহার করি। ব্যাগের চেইনটা খুলে চকোলেট নিয়ে যাই, আর ব্যাগের ভিতর দিয়ে যাই ক্ষমা চেয়ে ছোট্ট একটি চিরকুট। পুরোটাই চলে আমার বুদ্ধিতে! এরপর চলে চকোলেট ভাগাভাগি!!
কয়েকজন আবার সাধু সাজে; বলে, অনুমতি ছাড়া খাওয়া হারাম। আমি বলি, অনুমতি নিয়েছি। চকোলেট নেওয়াটা যেন ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে এটা লিখে চিরকুট ব্যাগে দিয়ে এসেছি।

তবে আজকে এই ঘটনার পরিসমাপ্তি ঘটল, আজকে গ্রুপ ক্লাসে যখন বসলাম তখন দেখি, আগের সপ্তাহে যে ব্যাগ থেকে চকোলেট নিয়েছিলাম সেই ব্যগটি। পাশের বন্ধুকে বললাম, তাড়াতাড়ি ব্যাগের চেইন খোল, দেখ চকলেট আছে কি না?
ও বলল দোস্ত এটা তো চকলেট না। কই দেখি আমার কাছে দে তো? মোড়ক টা খুলে আমি তো পুরো আবাক!ছোট ছোট কাগজ কেটে লেয়ারের প্যাকেটের ভেতর ঢুকিয়ে রেখেছে। হায়রে বুদ্ধিমান মেয়ে।

আজকে আর চকোলেট খাওয়া হলো না!

একটু পরেই শুনলাম, বর্ণালী ম্যামের আজ লাস্ট ক্লাস। উনি ছয় মাসের ছুটিতে যাবেন।
একটু খারাপ লাগছিলো বটে, ম্যামের সাথে কতদিন দেখা হবে না! হবে না ডায়েরি ক্লাসের বদলে সেই আড্ডা। কত কত অভিযোগ জমা দিয়েছি ম্যামের কাছে।
ক্লাস শেষে ম্যাম আমাকে ডাকলো।
বলল,” তোমাদের সাথে আবার ছয় মাস পর দেখা হবে, ভালো থেকো আর মন দিয়ে লেখাপড়া করো। তোমাদের সব সমস্যা আমি প্রিন্সিপাল স্যার কে বলে দিয়েছি, আশাকরি খুব শীঘ্রই সমাধান হবে।”

যখন চকলেট আর ম্যামের কথা ভাবছিলাম তখন দেখা হলো সুমাইয়া আর পুস্পিতার সাথে। সকালে পুষ্পিতা কথা বলতে চেয়েছিল তবে সমাজবিজ্ঞান ক্লাসে স্যার ঢুকে গিয়েছিল তাই কথা বলতে পারেনি। এ জন্য ক্ষমা চেয়ে নিলাম পুষ্পিতার কাছে।

সুমাইয়াঃ বাইজীদ, পুষ্পিতা তো তোমার ফ্যান হয়ে গিয়েছে!
আমি হাসলাম,
এবার পুষ্পিতার দেওয়া চিপস খাচ্ছিলাম।
হঠাৎ সুমাইয়া বলে উঠলো, ভাই আমি তো শেষ!
জিজ্ঞাসা করলাম কেন ভাই? ও বলল, “চার মাস পর প্রাক্তনের সাথে কলেজে দেখা।”
আমিঃ ও আচ্ছা তাই নাকি! যাক নতুন একটা থিম পেয়ে গেলাম গল্প লেখার জন্য।
সুমাইয়াঃ হুম, তা লিখো! কিন্তু, তোমার চাচাতো ভাইয়ের সমস্যা কি! এই কলেজেই ভর্তি হতে হবে? অনার্সের জন্য কি আর কোন কলেজ নেই?”
বললাম, ভাই তো এখানে ভর্তি হবে না। ওনার বন্ধুর ভর্তির জন্য লাল মিয়াতে এসেছে।
সুমাইয়াঃ যাক বাবা বাঁচা গেল! তাহলে তো আর দেখা হবে না।

এটা বলতে না বলতেই, আমাদের সামনে থেকে ভাই হেঁটে আসছিল।
পুষ্পিতা অবশ্য মুখ টিপে হাসতে ছাড়েনি। আর আমি অবাক।
তবে, দুজন দুজনের দিকে চোখ পড়তেই বড্ড অভিমানেই চোখ সরিয়ে নিল।

যাইহোক, ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এইবার আমি আলী কাকাকে নাজমুল স্যারের দেওয়া ছুটির টোকেন দিয়ে কলেজ থেকে বের হলাম।

আজ আর কারো সাথে আড্ডা দেওয়া হলো না, বাসে কন্ডাকটারের সাথে হাফ ভাড়া নিয়েও কথা হল না ।

বিঃদ্রঃ পুরোটাই সত্য ঘটনা। বর্ণালী ম্যামের জন্য দোয়া করি, উনি যেন আবার সুস্থ ভাবে আমাদের মাঝে ফিরে আসতে পারেন।

পুনশ্চঃ কোনরকম পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই লেখা, থিমটা বাসে আসার সময় ভাবছিলাম। বাসায় এসে নোট প্যাডে লিখে ফেলি।

কলমেঃ

মোঃ বাইজীদ হোসেন সা’দ
টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ

‌২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯